ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ 

সৌদির ’দ্য লাইন প্রকল্প’, ভূমি অধিগ্রহণে রাজি না হলেই গুলি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ৯ মে ২০২৪

আপডেট: ১৫:১৬, ৯ মে ২০২৪

শেয়ার

সৌদির ’দ্য লাইন প্রকল্প’, ভূমি অধিগ্রহণে রাজি না হলেই গুলি

সৌদি আরবের মরুভূমিতে তৈরি হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শহর ’দ্য লাইন’। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে স্থানীয়দের নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দিচ্ছে সৌদি প্রশাসন। তবে কেউ এর বিরোধিতা করলেই তাকে প্রাণঘাতী আঘাত করছে তারা। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।

সৌদির পশ্চিম অঞ্চলের মরুভূমিতে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দ্য লাইন সিটি তৈরির পরিকল্পনা করেছে দেশটি। মরুভূমির ভিতরেই কাঁচের দেয়াল দিয়ে এই বিশাল এলাকা তৈরি করা হবে। এই শহরের থাকবে নিজস্ব ইকোসিস্টেম। বেশ কয়েকটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানও সংযুক্ত আছে এই পরিকল্পনায়। প্রকল্পটির প্রারম্ভিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহম্মদ বিন সালমান জানিয়েছিলেন ওই এলাকা জনশূন্য। সেখানে কোনো মানুষ থাকে না। তবে আবার সৌদি প্রশাসনই জানায় ওই এলাকা থেকে প্রায় ছয় হাজার অধিবাসীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে এই সংখ্যা আরো বেশি। এই এলাকাগুলোতে প্রধানত বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস। বিবিসির স্যাটেলাইট ইমেজিং এ দেখা যায় এসব গ্রামগুলোর বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল সব নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে।

এসব এলাকা থেকে অধিবাসীদের উচ্ছেদের দায়িত্বে থাকাদের একজন কর্নেল রাবিহ আলেনেজি। গত বছর তিনি পালিয়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেন। সম্প্রতি বিবিসির কাছে এই বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাবিহ। সেখানে থেকে বের হয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাবিহ জানান, দ্য লাইন থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরের আল কুরাইবাহ গ্রামের জনবসতি সরাতে তার ওপর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ হুয়াইতি জনগোষ্ঠীর মানুষ। বহু প্রজন্ম ধরেই এই তাবুক এলাকায় তাদের বসবাস। ২০২০ সালের দিকে তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে স্বভাবতই বাঁধা দেন স্থানীয়রা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সৌদি প্রশাসন স্থানীয়দের ওপর ‘লিথাল ফোর্স’ বা প্রাণঘাতী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়। যে বা যারা তাদের বাড়ি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের ওপরেই এই আঘাত করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

 

হুয়াইতি জনগোষ্ঠীরই একজন আব্দুল রহিম আল হুয়াইতি। তবে তিনি তার জমি এই প্রকল্পে দিতে রাজি ছিলেন না। পরদিনই সৌদি কর্তৃপক্ষের গুলিতে নিহত হন রহিম। এর আগে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছিলেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, হুয়াইতি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা করেছিলো। প্রতিউত্তরে গুলি চালায় তারা। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘ জানিয়েছে সৌদি সরকারের দখলে বাঁধা দেওয়ায় কারণেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া একই ইস্যুতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আরো অনেককে। আব্দুল রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করার দায়েও গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এমনকি মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে পাঁচজনকে।

 

এসব বিষয়ে সৌদির বক্তব্য জানতে চাইলে কোনোভাবেই মুখ খোলেনি তারা। বিবিসি আরো জানিয়েছে, সৌদি প্রশাসন বরাবরই তাদের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এর আগে হাই প্রোফাইল মার্কিন গণমাধ্যমের সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় এই হত্যার সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন মুহম্মদ বিন সালমান।

দ্য লাইনের বিষয়ে সৌদি সরকারের প্রাধান্য অনেকটাই ওপরে। তেল বাণিজ্য থেকে সরে আসলে এই সিটিই হতে পারে তাদের সর্বোচ্চ ইকোনমিক জোন। কর্নেল রাবিহ জানান, এই কারণেই দ্য লাইনের বিষয়ে এতোটাই উগ্র সালমান। এখানে যে-ই বাঁধা দিতে আসুক না কেন, ক্রাউন প্রিন্স তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে এখনো ভয়ে আছেন রাবিহ। তবে তিনি মনে করেন তিনি যা করেছেন তা দেশের সাধারণ মানুষের জন্যই করেছেন।

 

 

দ্য নিউজ/ এস এস

live pharmacy
umchltd