ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ 

শিক্ষক সংকটে কারিগরি শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ৯ মে ২০২৪

আপডেট: ১৮:০৫, ৯ মে ২০২৪

শেয়ার

শিক্ষক সংকটে কারিগরি শিক্ষা

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে দেশ। সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। দেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় বেকার সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সরকার কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কারিগরিকে শিক্ষার মূল ধারায় নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের অন্যতম কারিগর শিক্ষক। কারিগরি ধারায় শিক্ষকের প্রবল সংকট। মোট পদের প্রায় ৭৫ শতাংশই খালি থাকার কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরটির কর্মকর্তারা। এই সংকটের পেছনে পিএসসির দীর্ঘ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দায়ী করছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

 

জানা গেছে, দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফাঁকা আসন নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বর্তমানে সরকারি শিক্ষক রয়েছে ৪৯ জন। পার্ট টাইম শিক্ষক রয়েছে ৩৬ জন। যদিও প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ২১০টি। অর্থাৎ ৭৫ ভাগের বেশি আসন ফাঁকা রয়েছে। ঢাকা পলিটেকনিকে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে ৩৯৪ জন। মোট শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬৬৭টি। ফাঁকা রয়েছে ২৭৩টি আসন।

 

খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ অনিমেষ পাল বলেন, আমাদের এখানে শিক্ষক সংখ্যা কম থাকায় ক্লাস, পাঠদান ও পরীক্ষা যথাযথভাবে নেয়া যাচ্ছে না। এখানে চারভাগের তিন ভাগের বেশি পদই খালি। ফলে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালাতে হচ্ছে। সরকার শিক্ষক সংকট দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি, শিগগিরই  এ সমস্যা খুব দ্রুতই শেষ হবে।

 

কারিগরি শিক্ষায় তিন স্তরে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সার্টিফিকেট স্তর (এইচএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও বেসিক ট্রেড কোর্স), ডিপ্লোমা স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং)  এবং ডিগ্রি স্তর (বিভিন্ন বিষয়ে বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন।

 

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব এওয়াইএম জিয়াউদ্দিন মামুন বলেন, কারিগরি শিক্ষায় আনুমানিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষকের সংকট রয়েছে। এই সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা। কারিগরিকে এখনও তারা ছোট বা হেয় করে দেখে। এখনও কেউ কেউ কারিগরির ১০ গ্রেডের চাকরি বাদ দিয়ে ১৩তম গ্রেডের চাকরি করে। আমরা মেধাবীদের খুবই কম পাই।  অধিকাংশ সময়ে দুর্বল মানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখানে যুক্ত হয়। এ সংকট উত্তোরণের জন্য মেধাবীদের আকৃষ্ট করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা করছি।

 

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্মকর্তারা জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রায় ৭৫ শতাংশের মতো শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। কারিগরির শিক্ষক নিয়োগ হয় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে। শিক্ষক চাহিদা দেয়ার পর থেকে নিয়োগ পর্যন্ত চার বছর সময় ব্যয় হয়। আবার যারা নিয়োগ পাই, সবাই জয়েন করতে চায় না। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষক সংকট দূর করতে শিক্ষক নিয়োগে ব্যবস্থা অধিদপ্তরের হাতে রাখতে হবে বা আলাদা একটি কমিশন তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় এ সংকট কাটবে না।

 

কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, কারিগরিকে মেইনট্রিম পর্যায়ে নেয়ার জন্য আমাদের দরকার শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি করা। কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আমরা সেটা পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান ব্যাহত হয়। সেজন্য অনেক সময় অভিভাবক সন্তানদের ভর্তি করতে উৎসাহ পান না। শিক্ষক স্বল্পতা দূর করা যায় আমরা সেজন্য চেষ্টা করবো।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিসিএস দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করতে চায়।  বর্তমানে নন-ক্যাডার ভুক্ত যারা আছে, তারা বেশি দিন স্থায়ী হন না।  জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ১৮শ’ নিয়োগপত্র স্বাক্ষর করেছি। তাদের মধ্যে জয়েন করেছেন ১১শ জন। মোট ৩৫ শতাংশ জয়েন করে নাই। দীর্ঘ তিন চার বছরের চাকরির পরীক্ষার পরও তাদের ৩৫ ভাগই জয়েন করেন না। এই ৩৫ ভাগ নিয়োগ দিতে আমাদের আরও তিন চার বছর লেগে যেতে পারে। এটি সমাধানের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

 

দ্য নিউজ/ এনএইচ/ আরপি

live pharmacy
umchltd

সম্পর্কিত বিষয়: