ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ 

পল্লবীর আতঙ্ক ‘কানকাটা’ গ্যাং

ইমরান খান

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৭ মে ২০২৪

আপডেট: ০০:১৪, ৮ মে ২০২৪

শেয়ার

পল্লবীর আতঙ্ক ‘কানকাটা’ গ্যাং

রাজধানীর পল্লবীতে আতংক ছড়াচ্ছে কানকাটা গ্যাং। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের নামের সাথে কাজেরও মিল রয়েছে। অনলাইনে টেন্ডার নিয়ে যার-তার কান কেটে দেয় ভয়ঙ্কর এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। গত চারমাসে এদের হামলার শিকার হয়েছেন পল্লবীর বেশ কয়েকজন। এরমধ্যে গেল ২রা মে রাতে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ২ জনের কান কেটে দিয়েছে এই বাহিনী। ‘কানকাটা’ গ্যাং-এর নেতৃত্বে রয়েছে শরিফ ওরফে ডাসা শরিফ ও তুহিন মিয়া। তারা ২০২১ সালের ১৬ মে পল্লবীর আলোচিত শাহিন উদ্দিন হত্যা ঘটনায় হওয়া মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এই মামলায় জমিনে মুক্ত হয়ে আবারও সক্রিয় ভয়ঙ্কর এই বাহিনী। কালের বিবর্তনে বদলেছে তাদের গ্রুপের নাম। বদলেছে অপরাধের ধরনও। এমন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পল্লবীর বাসিন্দারা।

 

‘কানকাটা’ গ্যাং-এর হামলার শিকার রমজান আলি রিপন দ্য নিউজকে বলেন, ২ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার বাউনিয়াবাধের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ তুহিন, শহিদুল, ডাসা শরিফ ও হানিফসহ অন্তত ২০-২৫ জন হাতে অস্ত্র নিয়ে আসে এবং আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ডাসা শরিফ তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে আমার মাথায় কোপ দেয়। এসময় ডাসা শরীফ আমার কানে চাকু দিয়ে ছুরিকাঘাত করে।

 

তার ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে রিপন বলেন, ৬ মাস আগে শহিদুলের সাথে আমার পরিবারের ঝগড়া হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই তারা আমার ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছি। বর্তমানে আসামিরা পলাতক।

 

অন্যদিকে, একই দিন রাতে ‘কানকাটা’ গ্রুপের হামলার শিকার হন বাউনিয়াবাধের আরেক বাসিন্দা মো. রনি। রিপনের ওপর হামলার ৩০ মিনিট আগে তিনি এই গ্রুপের হামলার শিকার হন। তিনি দ্য নিউজকে বলেন, আমি তখন দোকানে যাচ্ছিলাম। ডাসা শরিফ ও তার সহযোগীরা এসে আমার পথরোধ করে। তারা আমার বন্ধু সালাম কোথায় তা জানতে চায়। কিন্তু বলতে না পারায় তুহিন আমাকে কিলঘুষি মারা শুরু করে। ডাসা শরিফ তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে আমার মাথায় তিনটি আঘাত করে। সবশেষ, তুহিন তার হাতে থাকা স্যুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে আমার ডান ও বাম কান কেটে দেয়। বলে ‘তুই যতদিন বেঁচে থাকবি ততোদিন আমাদের মনে রাখবি। এটাও মনে রাখবি যে আমরা তোর কান কেটে দিয়েছি।’

 

‘কানকাটা’ কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন এমন দুই কিশোরের সঙ্গে কথা হয় দ্য নিউজের প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, শরিফ ওরফে ডাসা শরিফ ও তুহিন মিয়া মূলত শহীদুল ও পিন্টুর জন্য কাজ করে। তারা বিভিন্ন এলাকার কিশোর-যুবকদের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ডেকে নেয়। আস্তে আস্তে তাদের দখলবাজি ও খুন খারাবির সাথে জড়িয়ে দেয়। কেউ তাদের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে তাদের ওপর নির্যাতন করা শুরু করে তারা।

 

গ্রুপের নাম ‘কানকাটা’ গ্রুপ কেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এই গ্রুপের সদস্যরা যাদের ওপর হামলা করে তাদের প্রত্যেকের কান কেটে দেয়। এজন্যই তাদের গ্রুপের নাম কান কাটা গ্রুপ।

 

চার মাস আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ গ্রুপের হামলার শিকার হয় আরেক কিশোর আশিক। অভিযোগ রয়েছে, হামলার শিকার এই কিশোর নিজেও একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রথান। যদিও ছেলের বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে তার বাবা আব্দুল খালেক দ্য নিউজকে জানান, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় এই ‘কানকাটা’ গ্রুপের হামলার শিকার হয়েছিল তার ছেলে।

 

দ্য নিউজের অনুসন্ধান বলছে, কালশির ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত কাজ করছে বেশ কয়েকটি ডেভেলোপার কোম্পানী। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়ে বিভিন্ন জায়গা দখল করতে ব্যবহার করা হয় পল্লবীর কিশোর অপরাধীদের। এ গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পল্লবী থানায় বোমা হামলার মামলার আসামি শহিদুল, বাজার মাঠের ইয়াবা ডিলার পিন্টু ও কাল্লু। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও মারামারির একাধিক মামলা রয়েছে। প্রথমে বিভিন্ন ডেভেলোপার কোম্পানীর কাছ থেকে জমি দখলের কাজ নেয় তারা। এরপর সেই কাজগুলো বুঝিয়ে দেয় কানকাটা গ্রুপের ডাসা শরিফ ও তুহিন মিয়ার কাছে। জমি দখলের কাজে অনেক টাকা মেলে। তাই কখনো এই কাজগুলো কান কাটা গ্রুপ নিজেই করে। আবার কখনও কখনও হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপে টেন্ডার করে এই কাজগুলো বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গ্রুপকে বুঝিয়ে দেয় শরীফ ও তুহিন।

 

জানা গেছে, কালশি, বাউনিয়াবাধ ও ভাষানটেক এলাকায় ‘কানকাটা গ্রুপ’সহ পল্লবীতে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ৯টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ। অন্যান্য গ্রুপের নাম হলো- পাসওয়ার্ড গ্রুপ, কিলার সুমন গ্রুপ, ডিজে রায়হান গ্রুপ, সুটার যুবরাজ গ্রুপ, সুটার সাবু গ্রুপ, স্টাম্প মামুন গ্রুপ, সৌরভ গ্রুপ ও ইমন ইয়াবা গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন বাজার মাঠের ইয়াবা ডিলার পিন্টু, পল্লবী থানায় বোমা হামলার মামলার আসামি শহিদুল ও কাল্লু। তারা এলাকায় বড় ভাই হিসেবে পরিচিত। কিছু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় এসব কিশোরদের ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে পল্লবীর বাসিন্দার সবচেয়ে বড় আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কানকাটা গ্রুপ ও তাদের মদতদাতারা।

 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিরপুর জোনাল টিমের উপ পুলিশ কমিশানর মানস কুমার পোদ্দার বলেন, 'কানকাটা' গ্রুপের হামলার ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ছায়া তদন্ত করছি। আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

দ্য নিউজ/ আর পি

live pharmacy
umchltd

সম্পর্কিত বিষয়: