ঢাকা শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ 

মিল্টনের আশ্রমে ডাক্তার ছিল কিনা জানতে চান আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২ মে ২০২৪

শেয়ার

মিল্টনের আশ্রমে ডাক্তার ছিল কিনা জানতে চান আদালত

আদালতের কাঠগড়ায় থাকা মিল্টন সমাদ্দারকে উদ্দেশ্য করে বিচারক জানতে চান, আপনি যে আশ্রম চালাতেন, সেখানে কী কোনো ডাক্তার ছিল চিকিৎসা করার জন্য? উত্তরে মিল্টন বলেন, আমরা আমাদের আশ্রমের পাশের ইবনে সিনা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করাতাম।

এরপর বিচারক জানতে চান এখন কতজন শিশু ও বৃদ্ধ আপনার আশ্রমে আছেন? মিল্টন উত্তরে বলেন, ২৫৬ জন আছে। এরপর আদালত প্রশ্ন করেন, এখন পর্যন্ত কতজন লোক আশ্রমে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন? উত্তরে মিল্টন বলেন, ১৩৫ জন আমার হিসেবে মারা গেছে। তাদের ডেথ সার্টিফিকেট ও কবরস্থানের রশিদ আছে। 

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে মিল্টন সমাদ্দার ১ কোটি ২০ লাখ ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন। আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঘোষণা দেন। এছাড়াও জালজালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুর সনদপত্রে ভুয়া সনদপত্র প্রদান করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ জনের নামে মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন। 

আসামি মিল্টন সমাদ্দার দীর্ঘদিন ধরে মানবতার সেবার নামে বিভিন্ন বয়স্ক এবং শিশুকে নিয়ে শারীরিক-মানসিক আঘাত করে থাকে। কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করেন মর্মে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার হয়েছে। আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে, খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। যাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটিত হয়নি।

উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আসামিকে উপস্থিত করে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই কামাল হোসেন। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন আদালত। 

এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ও আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম শিকদার। পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, আসামি মিল্টন সমাদ্দার ডাক্তার না হয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ দিতেন এবং মানবিক কাজের কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করতেন। 

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার শুনানির সময় আদালতকে বলেন, মিল্টন নিজেকে কোথাও ডাক্তার বলে পরিচয় দেননি। তিনি ভুয়া মৃত্যু সনদ দিয়েছেন তার স্বাক্ষরিত এমন কোনো সনদ তদন্ত কর্মকর্তা দেখাতে পারেননি। এই সমাজে একজন মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকলে, কেউ খোঁজও নেয়না। সেখানে মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে বেওয়ারিশ, অসুস্থ, অর্ধপঁচা মানুষদের নিয়ে সেবাদান করতেন। 

উল্লেখ্য, বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে 'চাইল্ড এন্ড ওল্ড এজ কেয়ার' নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেওয়ারিশ শিশু ও বৃদ্ধের আশ্রম তৈরি করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। 

দ্য নিউজ/ এফ এইচ এস/ এন এইচ

live pharmacy
umchltd

সম্পর্কিত বিষয়: