ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ 

বিপাকে ৪ জেলার কৃষক

কুষ্টিয়ার গঙ্গা-কপোতাক্ষের সব পাম্প হাউজ অকেজো

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৯ মে ২০২৪

শেয়ার

কুষ্টিয়ার গঙ্গা-কপোতাক্ষের সব পাম্প হাউজ অকেজো

কুষ্টিয়ার গঙ্গা-কপোতাক্ষের সবকটি পাম্প হাউজ অকেজো অবস্থায় রয়েছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প সরবরাহ বন্ধ থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। হুমকির মুখে পড়েছে বোরো আবাদ।

 

বৈশাখ মাস প্রায় শেষের দিকে। কোথাও পানির দেখা মিলছে না। পদ্মায় পানির সমতল (লেভেল) স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। পদ্মায় পানি কম থাকায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে চলতি বোরো মৌসুমে পানি সংকটে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ প্রবাদের মতো অবস্থা বিরাজ করছে। হুমকিতে রয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমির আবাদ।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিকে প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়লে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এ অঞ্চলের কৃষি। সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জিকে প্রকল্পের আওতায় চলতি বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার এই চার জেলার ১৩টি উপজেলার ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে ১০ মাস পানি দেওয়ার কথা ছিল। যথাসময়ে পানি সরবরাহ না হওয়ায় সেচ প্রকল্পাধীন এলাকার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে প্রকল্পের পানি না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

 

জিকে সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চার জেলার কৃষির গুণগত মান বৃদ্ধি, স্বল্প ব্যয় ও উৎপাদন বাড়ানো ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। চার জেলার ১৩ উপজেলার ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি প্রকল্পের আওতাধীন ছিল প্রথমদিকে। পরে প্রকল্পের এলাকা আস্তে ধীরে কমে আসে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেচ সুবিধা দিতে জিকে সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প চালু করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের কৃষকদের এই সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। এগুলো একযোগে সেকেন্ডে ১ হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস পানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে দুটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। পরে একটি মেরামত করা হয়।

ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম এলাকার এক কৃষক বলেন, আমার ধানের জমিতে পানির দরকার কিন্তু পাচ্ছি না। কখনো পাম্প নষ্ট, কখনো নদীতে পানি নেই, এমনও জানতে পারছি। এ মৌসুমে জিকে ক্যানেলে পানি না থাকায় আশপাশের নলকূপেও পানি উঠছে না। পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে গেছে। প্রধান খালে পানি থাকলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। এবার ফসল ফলাতে বিঘায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। তারপরও উৎপাদন সেভাবে হবে বলে মনে হয় না। তিনি আরো বলেন, ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং পানিচুক্তি করেও পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় পদ্মার বুকে বালুর চর দেখা দিয়েছে।

 

ভেড়ামারা প্রধান পাম্পহাউস সূত্রে জানা গেছে, বছরের ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। পাম্প দিয়ে ওঠানো পানি ৪ জেলায় ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখাখাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে যায়। জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখাখালগুলোতে পানি থাকলে সেচ সুবিধাসহ আশপাশের টিউবওয়েল ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ হয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাম্প স্টেশন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা। পদ্মায় পানি কমে গেছে। পাম্প চালু করতে প্রয়োজন নদীর সঙ্গে যুক্ত ইনটেক চ্যানেলে ন্যূনতম পানির স্তর ৪ দশমিক ৫ মিটার রিডিউসড লেভেল (আরএল) থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে নদীতে প্রয়োজনীয় পানির স্তর নেই। পানির স্তর বৃদ্ধি পেলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

 

তিনি আরো বলেন, পানির স্তর নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে নামলে পাম্প মেশিনের কয়েল ও বিয়ারিংয়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে মেশিনে শব্দ ও ঝাঁকুনি হয়। এসব সমস্যার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। পাবনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উত্তরাঞ্চল পানি পরিমাপক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মায় পানি কমেছে। গত রোববার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেভেল ৪ দশমিক ৩০ মিটার ছিল। আপাতত পানির স্তর কমের দিকে বলেও জানান তিনি। ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, নদীগুলোর নাব্য না থাকার পাশাপাশি পানির স্তর বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের ব্যয় বাড়ছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। পানি এলেও কিছুটা সুফল মিলবে কৃষকদের। তা নাহলে ধান চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

 

এ ব্যাপারে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, জিকে সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সেচ এলাকায় বোরিং চালানো নিষিদ্ধ থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। জিকে সেচ সম্প্রসারণ এলাকার চাষিদের সেচকাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনবোধে চাষিদের বোরিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।

দ্য নিউজ/এমএম

live pharmacy
umchltd