ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪ 

জীবনের পড়ন্ত বেলায় নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, সঙ্গী পেটের ক্ষুধা 

বরগুনা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ৯ মে ২০২৪

শেয়ার

জীবনের পড়ন্ত বেলায় নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, সঙ্গী পেটের ক্ষুধা 

বরগুনা আমতলীর ইন্দ্র মনি বয়স (৭০) ছুঁই ছুঁই। শেষ জীবনে এসে নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, সকলের সহযোগিতায় পেতে চায় একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই। অন্যের দেয়া ৫ শতক জমিতে ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। 

বরগুনার আমতলীতে গুলিশাখালি ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের ইন্দ্র মনি জীবনের তাগিদে কখনো ঝিয়ের কাজ কখনো বা দিনমজুরের কাজ। এ কাজ করেই সংসারের হাল চালিয়েছেন তিনি। ইন্দ্র মনি এখন বয়সের চাপে কাজেও বের হতে পারেন না। বৃদ্ধের ছাপ স্পষ্ট চেহারায় ফুটে উঠেছে। রোগা-সোগা এই বৃদ্ধা তিন বেলা খাবারও ঠিক মতো খেতে পারেন না। তিনবেলা খাওয়ার জোগান দিতে যেন তার "ভাত আনতে পান্ত ফুরানোর মতো" স্বামী, সন্তান হারা। ছেলের বউ ও নাতি নাতনিদের কোনো মতে বেচে আছেন। ইন্দ্র মনির নিজস্ব কোনো আয় নেই।

ছেলের বউয়ের চায়ের টং দোকান থেকে যা উপার্জন করেন তিন বেলাও খাওয়া হয় না তাদের সংসারে। উপার্জনক্ষম পুরুষ না থাকায় পড়ালেখাও হয়নি বাচ্চাদের। 

তিন বেলা খাওয়া না হলেও থাকার জায়গাও নেই তাদের। ছোট ছাপড়ার ঝুপড়ির মতো হালকা টিন শেডের ঘর তার। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের উপরের ছাউনি থেকে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ে। ঘরের ভিতরের সব কিছু ভিজে তছনছ হয়ে যায় । 

বৃষ্টির সময়ে তার জীবন চলে অন্যের বাড়িতে। 
পানি কাদায় ঘরের ভিতর চলাফেরা করতে ঝামেলা পোহাতেও হয় তাদের। ঘরের চারপাশে ভালো বেড়া না থাকাতে বাতাসে বৃষ্টির পানি বেড়ার ফাঁক দিয়ে আসে। একটু ঝর বাতাস আসলেই ঘরের উপরের ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে যায়।

ভূমিহীনদের ঘর উপহার দিয়েছে সরকার। ভেবেছিল সেও পাবো। কিন্তু আজ পর্যন্ত পেল না। ঝুপড়ি ঘরেই থাকতে হচ্ছে তাকে। একটি ঘরের জন্য বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানের কাছে কাছে ঘুরেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি, কিছুই মেলেনি তার। বর্তমানে অসহায় জীবনযাপন করছেন এই নারী ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে। 

মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের ন্যায় আমতলী উপজেলায় কয়েক ধাপে হতদরিদ্রদের ঘর দেয় সরকার। বৃদ্ধা একটি ঘর পাওয়ার আশায় জনপ্রতিনিধিদের কাছে কাছে ঘুরেও এক বুক হতাশার চিহ্ন নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। 

ইন্দ্র মনি বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো না। পেটে রয়েছে ক্ষুধার জ্বালা। স্বামী সন্তান হারা আমি পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবো? কে সাহায্য করবে আমাকে? আমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমাকে যেন একটা ঘর দেয়। মৃত্যুর আগে হলেও যেন সে ঘরে থেকে যেতে পারি।

সাথী রানী বলেন, আমার চার ছেলে মেয়েদের কে নিয়ে কোথায় কার কাছে যাবো? ওদের বাবা মারা গেছেন তাও ১০ বছর। তখন থেকেই এই ঝুপড়িতে বসবাস করছি। ভাত'ই ঠিক মতো খেতে পারি না - ঘর তুলবো কি করে? বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারি নাই বলে - স্কুলেও পাঠাতে পারি না।

গুলিশাখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড: মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ইন্দ্র মনি ঘর পাওয়ার যোগ্য হলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের সাথে কথা বলে মুজিব বর্ষের ঘর '' যার জমি আছে সে ঘর পাবে" এই প্রকল্পে আওতায় তাকে ঘর দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে। 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, "ক" তালিকার কাজ চলমান। "ক" তালিকায় যারা আছেন। যাদের জমি নেই তারা। "ক" তালিকার কাজ শেষ হলেই "খ" তালিকার কাজ শুরু করবে সরকার। "খ" তালিকায় তারা থাকবে যাদের ২ শতক বা তার থেকে বেশি জমি আছে তাদের সরকার ঘর করে দিবে। আবেদন করতে বলেন আমরা চেষ্টা করবো ঘর দেয়ার জন্য।

 

দ্য নিউজ/এমএম

live pharmacy
umchltd