কেন পরিচয় লুকিয়েছিলেন এসআই আশিক? (ভিডিওসহ)

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

দ্য নিউজ/ আর পি

প্রকাশিত : ১১:৩৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৪৩ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার

কখনও গরু ব্যাপারী, কখনও ঘোড়ার গাড়ির মালিক। কখনও নৌকায় পারাপার করতেন যাত্রীদের। সিরাজগঞ্জের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এভাবেই জীবনযাপন করে আসছিলেন আশিকুর রহমান। মিশে গিয়েছিলেন ওই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে। একেবারেই আপন করে নিয়েছিলেন তাদের। তবে এসব পেশার বাইরেও তার রয়েছে আরেকটি পরিচয়। তিনি পুলিশের এসআই আশিকুর রহমান।

 

দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ। তবে কেন তিনি আসল পরিচয় লুকিয়েছিলেন? ৭ বছর পর তার এই ছদ্মাবেশ ধারনের জবাব মিলেছে সম্প্রতি। চাঞ্চল্যকর সুর্বণা হত্যার ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনে এই কৌশল নিয়েছিলেন আশিক। অবশেষ সফল হয়েছেন। জট খুলেছেন মামলার। সক্ষম হয়েছেন সুর্বণাকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে।

 

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশান- পিবিআই-এর তদন্তে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দত্তকান্দি হাই স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার দত্তকান্দি গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে স্কুল ছাত্রী সুবর্ণা খাতুন। অনুষ্ঠান শেষে সুবর্ণা বাড়ীতে না আসলে উৎকন্ঠায় পড়ে যান বাবা-মা। পরদিন মধ্য শিমুলিয়া চরের ফসলী জমিতে খুঁজে পাওয়া যায় সুবর্ণার মরদেহ। পরে স্বজনদের সহযোগিতায় চৌহালী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার ও ময়নাতদন্ত করে। এ ঘটনায় সুবর্ণার বাবা শুকুর আলী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে থানা পুলিশ। তবে ওই প্রতিবেদনে নারাজি আবেদন করেন সুবর্ণার বাবা। পরে মামলাটি সিরাজগঞ্জ পিবিআইকে দিলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এসআই আশিকুর রহমান শুরু করেন তদন্ত।

 

তদন্তে বেরিয়ে আসে সুবর্ণা খুনের লোমহর্ষক ঘটনা। তদন্তে গ্রেপ্তারকৃত আসামি ছাব্বির হোসেন ও শাকিব খান জানান, তারা এবং দত্তকান্দি গ্রামের বশির মেম্বারের ছেলে মিলন পাশাসহ আরও ৫ জন জোর করে ধর্ষণ করে সুবর্ণাকে। সবাইকে এই ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে সুবর্ণার পরণের ওড়না তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর সুবর্ণার শরীরে মাটি ছিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

 

দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর সুবর্ণা হত্যার খুনি ছাব্বির হোসেনকে রাজধানীর শ্যামলী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জের চৌহলী সোলের বাজার হতে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক খুনি শাকিবকে। গ্রেপ্তারকৃত ছাব্বিরের বর্তমান বয়স ২০ এবং শাকিবের ২১। অর্থাৎ ১৩ ও ১৪ বছর বয়সেই তার ঘটিয়েছিলেন এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড।

 

এমন লোমহর্ষক হত্যায় জড়িত খুনিদের আটকের পর ২১ এপ্রিল (রোববার) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশান-পিবিআই সিরাজগঞ্জ জেলা এসপি রেজাউল করিম।

 

এদিকে দীর্ঘদিন পর খুনিদের আটকের ঘটনায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিহত সুবর্ণার বাবা শুকুর আলী। তার প্রত্যাশা খুনিদের ফাঁসির মাধ্যমে শান্তি পাবে তার প্রিয় কন্যার আত্মা।

 

ভিডিও লিঙ্ক:   https://www.youtube.com/watch?v=z0rh0kkBn6Y